সিমবিয়ান মোবাইল দিয়ে শিখুন ওয়েব ডিজাইন [পর্ব-১] :: কিছু কথা এবং প্রয়োজনীয় টুলস।

সিমবিয়ান মোবাইল দিয়ে ওয়েব ডিজাইন?অনেকে হয়ত শুনেই অবাক হবেন!এটা কিভাবে সম্ভব?
ভাই,সম্ভব!আমি শিখেছি।আপনিও পারবেন।

আমি এরকম অনেকেই দেখেছি যাদের ওয়েব ডিজাইনে প্রচন্ড আগ্রহ আছে কিন্তু পিসি নেই বলে শিখতে পারছেন না।বিশেষ করে আমার মত গ্রামের ছেলে যারা আছেন।আমি জানি,একটা নিম্নবিত্ত পরিবারে বাস করে যেখানে একটা মোবাইল কেনাই কষ্টের ব্যাপার সেখানে পিসি কেনা স্বপ্নের মত!

কিন্তু এখন আপনি একটা সিমবিয়ান 3rd editon or higher editoner একটা মোবাইল ম্যানেজ করলেই ওয়েব ডিজাইন শিখতে পারবেন।আমি Nokia N73 ব্যাবহার করে প্রথম ওয়েব পেজ ডিজাইন করেছিলাম।নকিয়া 3rd edtion or higher editoner এর ফোন গুলোতে ডিফল্ট ভাবে দুইটা ইন্টারনেট ব্রাউজার থাকে।একটা Service নামে এবং অন্যটি Web (এটি দিয়ে ডেক্সটপ ব্রাউজারের মত ব্রাউজ করা যায়।এটি আমাদের কাজে লাগবে) নামে।অ্যাড্রয়েড আসাতে এখন সিমবিয়ান সহজলভ্য।1000-1500 টকার মধ্যে আপনি পুরোনো সিমবিয়ান কিনতে পারবেন।

কিছু কথা


শুরুতেই আমি আমার জীবনের কিছু কথা বলে নিতে চায় যেটা ওয়েব ডিজাইন রিলেটেড এবং এটা নতুনদের উত্‍সাহ যোগাবে আশাকরি।

গ্রামে জন্মেও আর দশটা সাধারণ ছেলের মত করে আমি বেড়ে উঠিনী।যেখানে ওরা সারাদিন হৈ-হুল্লা,ছোটাছুটি,খেলাধুলা নিয়ে থাকত,সেখানে আমি একাকী চুপ চাপ থাকতাম।তেমন কারো সাথে মিশতাম না।প্রযুক্তির প্রতি আমার প্রচন্ত আগ্রহ এবং কৌতুহল ছিল।

2012 সালের মাঝামাঝি সময়ে টেকটিউনস এর মাধ্যমে প্রথম ওয়েব ডিজাইন সম্পর্কে জানতে পারি।কিন্তু এটা আসলে কি বুঝতাম না।এর কিছুদিন পর ওয়েব ডিজাইন সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা লাভ করি এবং এর সাথে সংযুক্ত html ও css সম্পর্কে জানতে পারি।এর আগে যখন নেট ব্রাউজ করতাম তখন খুব কৌতুহল হত যে,ওয়েব সাইট কিভাবে বানায়!

একদিন google এ html tutorial লিখে সার্চ দিলাম এবং w3school এর সাথে পরিচিত হলাম।ওখানে অনলাইন এডিটরের মাধ্যমে প্রথম কোড এডিট করা শুরু করলাম।w3school এর মাধ্যমে html এর ট্যাগ গুলোর সাথে পরিচিত হলাম কিন্তু তেমন কিছু বুঝতে এবং প্রকৃত ওয়েব ডিজাইনের স্বাদ অনুভব করতে পারছিলাম না।

যতগুলো টিউটোরিয়াল পড়ছিলাম সবখানে পিসি দিয়ে ওয়েব পেজ ডিজাইনের পদ্ধতি দেখানো হচ্ছিল।এ অবস্থায়,আমার খুব খারাপ লাগছিল এই ভেবে যে আমার তো পিসি নেই কেনাও সম্ভব নয় তাহলে কি আমি শিখতে পারবনা!কিন্তু ছোটবেলা থেকে আমার প্রচুর ধৈয্য ছিল এবং সমস্যায় পড়লে বিকল্প কিছু করার চেষ্টা করতাম এবং শেষমেশ সমাধান করেই ফেলতাম।

কিছু দিন শুধু ভেবেই কাটালাম যে মোবাইল দিয়ে কিছু একটা ব্যাবস্থা করা যেতে পারে কিনা!কয়েক দিন ধরে দিন রাত ভাবার পর অবশেষে মোবাইল দিয়ে ওয়েব ডিজাইন শেখার পদ্ধতি আবিষ্কার করে ফেললাম।এরপর আনন্দের সাথে html এর tag গুলো প্র্যাকটিস করতে থাকলাম কিন্তু গাইড লাইনের অভাবে কিছুতেই একটা পরিপূর্ণ ওয়েব পেজ ডিজাইন করতে পারছিলাম না।

এরকম অবস্থায় 2012 সালের শেষের দিকে ফেসবুকের মাধ্যমে রাসেল ভাই এর আর.আর.ফাউন্ডেশন এর সাথে পরিচিত হলাম এবং ওনার ভিডিও টিউটোরিয়াল সম্পর্কে জানলাম।কিন্তু যেখানে 23.50 টাকা দিয়ে 25MB কিনে নেট ব্যাবহার করি সেখানে এত বড় টিউটোরিয়াল নামাবো কিভাবে আর তাছাড়া HD ফরমটের টিউটোরিয়াল আমার ফোনে তো চলবেনা।কি করব?আবার সমাধান বের করে ফেললাম,online-convert.com এর মাধ্যমে টিউটোরিয়াল টি সব থেকে লো কোয়ালিটিতে ফরমেট করে নামালাম।সাইজ হল 15 মেগাবাইট।ওনার ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখতে লাগলাম কিন্তু কোড মোটেই বোঝা যাচ্ছিল না।কিন্তু রাসেল ভাই এর উপস্থাপন টা খুব সুন্দর এবং সহজ ছিল।আমি উনার কথা গুলো শুনতে শুরু করলাম এবং কোড লিখতে শুরু করলাম।পরিশেষে ব্রাউজারে ওপেন করে দেখলাম আমি আমার জীবনের প্রথম ওয়েব পেজ তৈরী করতে পেরেছি এবং সেটা মোবাইল (Nokia N73) দিয়েই।সেদিনের সেই আনন্দ-ময় মুহুর্তটা আমি সারাজীবনেও ভূলতে পারবোনা।

প্রয়োজনীয় টুলস


হয়ত অনেক ফালতু বকবক করলাম!যাহোক,এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রয়োজনীয় টুলস গুলো সম্পর্কে যেগুলো আমাদের ওয়েব পেজ ডিজাইনে কাজে লাগবে।

  • Xplore-এটি সিমবিয়ান ব্যাবহারকারী দের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি অ্যাপস।না থাকলে এখানে থেকে নামিয়ে নিন।
  • SIC_FTP-এটি একটি FTP অ্যাপস।যেটা ওয়েব সার্ভারে ফাইল আপলোডের জন্য কাছে লাগবে।এখান থেকে নামিয়ে নিন।

উপরের অ্যাপস দুইটা নিয়ে আমরা ওয়েব পেজ ডিজাইন এবং সার্ভারে আপলোড করতে পারব।একদম টেনশন নিবেন না,আপনি পারবেন।আমি আছি আপনার সাথে।

আজ এ পর্যন্ত।মোবাইল দিয়ে আর লিখতে পারছিনা।আগামী পর্বে থাকছে সিমবিয়ান দিয়ে প্রথম ওয়েব পেজ ডিজাইন।সেই অব্দি ভাল থাকুন।

Facebook Comments

S.k.joy

খুব সাধারণ একজন। বসবাস গ্রামে। জন্ম, বেড়ে উঠা এখানেই। অসম্ভব ভালবাসা এই গ্রামীন জীবন, প্রকৃতি আর পরিবেশের প্রতি। কাজ পড়াশোনার ক্ষেত্রে বার বার সুযোগ এলেও শহরবাসী হয়ে উঠতে পারিনি শেষ পর্যন্ত। শহরের অতি আধুনিকতা, কংক্রিটে মোড়া সুউচ্চ অট্টেলিকায় বন্দি জীবন আমায় কখনও আর্কষিত করতে পারিনি। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে মেঠো পথে বেরিয়ে পড়ি সকালটাকে উপভোগ করতে। রাস্তার দুপাশে সারি সারি গাছ গুলোতে জেগে উঠা পাখিগুলো আমায় স্বাগত জানায়। বুক ভরে নিশ্বাস নিই। শিশিরে ভেজা ঘাস গুলো প্রতি মুহুর্তে সকালের কোমলতাকে জানান দেয়। সূর্যের রোদ সবার আগে গায়ে মেখে ফিরে আসি। দাদু-ঠাম্মা, ছোট ছোট ভাই বোন সবাইকে পরিবার। এইতো জীবন। খুশিতে ভরা জীবন। দূরে গিয়ে সবার থেকে আলাদা হয়ে নিজের মত থাকার মধ্যে জীবনের কোন মানে খুঁজে পাইনা আমি।