রিমোট দিয়ে ফ্যান লাইট কন্ট্রোল - জয়ের বাংলা ব্লগ

আসুন রিমোট দিয়ে ফ্যান লাইট কন্ট্রোল করি। আপনিও পারবেন বানাতে – ভিডিও সহ।

নমস্কার, দীর্ঘদিন পর সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি ইলেকট্রনিক্স রিলেটেড নতুন লেখাতে। রিমোট দিয়ে ফ্যান লাইট কন্ট্রোল করা যায় এমন একটি সার্কিট আজ আমরা তৈরী করব। বেসিক এবং সহজ ড্রায়াগ্রাম হওয়াতে আশাকরি একজন বিগিনারও তৈরী করতে পারবেন সার্কিটটি।

এনালগ সার্কিট হওয়াতে বাসার যেকোন রিমোট দিয়েই ব্যবহার করা যাবে সার্কিটটি। ইনবক্সে অনেকে বলেছেন, সব কানেকশন ঠিকমত দেবার পরেও নাকি তাদের সার্কিটটি কাজ করেনা। কেন কাজ করেনা? কোন সেকশনে সমস্যা হতে পারে সম্ভব্য সব কারণ নিয়েই কথা হবে আজ। তার আগে চলুন দেখে নিই ড্রায়াগ্রাম টি।

রিমোট দিয়ে ফ্যান লাইট কন্ট্রোল – সার্কিট ড্রায়াগ্রাম

রিমোট দিয়ে ফ্যান লাইট কন্ট্রোল
সার্কিট ড্রায়াগ্রাম

দেখতেই পারছেন খুব সহজ একটা ড্রায়াগ্রাম। এই সার্কিটটি তৈরী করে আপনি ১টি লোড(এসি/ডিসি) কন্ট্রোল করতে পারবেন। যেমন ফ্যান, লাইট, পানির পাম্পের মোটর সহ ৩০০-৫০০ ওয়াটের(এটা নির্ভর করবে রিলের কারেন্ট রেটিং এর উপর) যেকোন লোড কন্ট্রোল করতে পারবেন।

এই ড্রায়াগ্রামের প্রাণ হল CD4017 মানের আইসি। যেটা Decade Counter নামেই পরিচিত বেশী। ১০ দশটা আউটপুট পিন আছে এটার। ক্লক(১৪) পিনে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যাবধানে ভোল্টেজ প্রদানের কারণে এটার আউটপুট ০-৯ পর্যন্ত বাড়তে থাকে। অনেক দারুণ দারুণ প্রজেক্ট করে ফেলা যায় এটা দিয়ে। যাহোক, এ বিষয়ে অন্যকোন লেখাতে আলোচনা করা যাবে। চলুন দেখে নিই কি কি পার্টস/কম্পোনেন্ট লাগবে এটা তৈরী করতে। আর তাতে কেমন খরচ পড়বে।

পার্টস/কম্পোনেট লিষ্ট

  1. আইসি – CD4017 (১ পিস – দাম ২০ টাকা)
  2. রিমোট সিগন্যাল রিসিভার – (১ পিস -দাম ১০-১৫ টাকা)
  3. রেজিষ্টর – ১০০কে (১ পিস – দাম ৫০ পয়সা)
  4. রেজিষ্টর – ৪.৭কে (২ পিস – দাম ১ টাকা)
  5. রেজিষ্টর – ১কে (১ পিস – দাম ৫০ পয়সা)
  6. রেজিষ্টর – ১০০ওহম (১ পিস – দাম ৫০ পয়সা)
  7. ট্রান্সজিষ্টর – BC547 (১ পিস – দাম ৩ টাকা)
  8. ট্রান্সজিষ্টর – BC557 (১ পিস – দাম ৩ টাকা)
  9. ক্যাপাসিটর – 10uf 16v (১ পিস – দাম ২ টাকা)
  10. রিলে – ৫ ভোল্ট (১ পিস – দাম ২০ টাকা)
  11. এলইডি – ৫ মিলিমিটার সাইজের (১ পিস – ১ টাকা)

উপরে দেওয়া কম্পোনেটের লিষ্ট ছাড়াও কাজ করতে গেলে লাগবে ভেরোবোড, রিমোট, সোল্ডারিং আইরন, রাং, রজন, তার ইত্যাদি। একজন ইলেকট্রনিক্স হবিষ্টের বাসায় সাধারণত এগুলা থাকে। তাহলে চলুন এবার সার্কিটটি ড্রায়াগ্রাম অনুযায়ী তৈরী করে ফেলা যাক।

রিমোট দিয়ে ফ্যান লাইট কন্ট্রোল – সার্কিট তৈরী

নিচে দেখতে পারছেন আমাদের সার্কিট কম্পিলিট হয়ে গেছে। এটা আমি ভেরোবোর্ডে(ডট) কম্পিলিট করেছি। আপনার কাছে ভেরোবোর্ড না থাকলে মোটা কাগজ কিংবা পাতলা প্লাষ্টিক বোর্ডের উপরেও তৈরী করতে পারেন। কোন সমস্যা নেই। কেবল ড্রায়াগ্রাম অনুযায়ী ঠিকমত কানেকশন করলেই হবে।

রিমোট দিয়ে ফ্যান লাইট কন্ট্রোল - জয়ের বাংলা ব্লগ
কম্পিলিট সার্কিটের ছবি

উপরে কম্পিলিট সার্কিটের ছবি দেখতে পারছেন যেটা আমি ভেরোবোর্ডে তৈরী করেছি। এবার নিচে সংযোগ এবং রিমোট সহ কম্পিলিট সার্কিটের ছবি দিলাম। নিচের ছবিতে আপনারা যে রিমোর্টের ছবি দেখতে পারছেন তা হল এমপিথ্রি প্লেয়ারের রিমোট। আপনি যেকোন রিমোট ব্যবহার করতে পারেন। ড্রায়াগ্রাম অনুযায়ী এই সার্কিটে ৫ ভোল্ট ডিসি ভোল্টেজ সাপ্লাই দিতে হবে। আমি মোবাইল চার্জারের মাধ্যমে ৫ ভোল্ট সাপ্লাই দিয়েছি। আপনিও চাইলে মোবাইলের চার্জার ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া যেকোন ৫ ভোল্টের ডিসি সোর্স থেকেই ভোল্টেজ সাপ্লাই দিতে পারেন।

রিমোট দিয়ে ফ্যান লাইট কন্ট্রোল - জয়ের বাংলা ব্লগ
সংযোগ সহ কম্পিলিট সার্কিটের ছবি

ছবিতে দেখতে পারছেন সার্কিটে লোড হিসাবে আমি ৬০ ওয়াটের একটি এসি বাল্ব ব্যবহার করেছি। আপনি যেকোন ধরণের এসি এবং ডিসি লোড ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন, ফ্যান,লাইট,টিভি,হোম থিয়েটার,ভিডিও প্লেয়ার ইত্যাদি। কত ওয়াটের লোড ব্যবহার করতে পারবেন তা নির্ভর করবে রিলের কারেন্ট রেটিং এর উপর।

রিমোট দিয়ে ফ্যান লাইট কন্ট্রোল – ভিডিও টিউটোরিয়াল

আপনাদের সুবিধার জন্য একটা ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরী করেছি। যার মাধ্যমে এই সার্কিট কিভাবে তৈরী করতে হয় তা দেখতে পারবেন। এছাড়া এই সার্কিট সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তর্থ্য জানতে পারবেন।

যে সব কারণে সার্কিট টি কাজ না করতে পারে

আপনি যদি নির্ভুল ভাবে ড্রায়াগ্রাম অনুযায়ী সার্কিটটি তৈরী করতে পারেন তাহলে এটা ১০০% ভাগ কাজ করবে। বেশকিছু ইলেকট্রনিক্স গ্রুপে এরকম অনেক পোষ্ট দেখেছি যে, অনেকে এই ধরণের ড্রায়াগ্রাম ব্যবহার করে বার বার ব্যার্থ হয়েছেন। তাদের ব্যার্থতার সম্ভব্য কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করলাম। যাতে তারা নিজেদের ভুল গুলো শুধরে নিতে পারেন।

  • নির্দিষ্ট ভোল্টেজ রেটিং এর ভোল্টেজ সাপ্লাইঃ ড্রায়াগ্রাম অনুযায়ী আপনাকে সার্কিটে সঠিক রেটিং এর ডিসি ভোল্টেজ সাপ্লাই দিতে হবে। নতুবা সার্কিটটি কাজ করবেনা।
  • ভাল আই আর সেন্সর ব্যবহারঃ যেহেতু এটি রিমোট কন্ট্রোল সার্কিট তাই সার্কিটে ব্যবহৃত আই আর সেন্সর টা অবশ্যই ভাল হতে হবে। নতুবা সার্কিটটি কাজ করবেনা। কিভাবে সেন্সরটা চেক করবেন তা উপরের ভিডিওতে দেখিয়েছি।
  • আই আর সেন্সরের পিন আউট অনুযায়ী কানেকশন দেওয়াঃ আই আর সেন্সরের ৩ টা পিন থাকে। Signal out, GNG & VCC । বাজারে অনেক ধরণের IR sensor পাওয়া যায়। ধরণ অনুযায়ী প্রত্যেকটার পিন আউট আলাদা। যেমন একটা সেন্সরের বাম পাশের পিনটা VCC হলে অন্য একটা সেন্সরের একেবারে ডান দিকের পিনটা VCC . তাই অবশ্যই গুগল করে আপনার কাছে থাকা সেন্সরের পিন আউট টা বের করে নিতে হবে। নতুবা ভুল কানেকশনে সার্কিটটি কাজ করবেনা এবং ক্ষেত্র বিশেষে সেন্সরটি পুড়ে যাবে।
  • আইসির সঠিক কানেকশনঃ এই সার্কিটের প্রাণ CD4017 মানের আইসি। তাই ড্রায়াগ্রাম অনুযায়ী অবশ্যই আইসির সঠিক কানেকশন দিতে হবে। সার্কিটে ব্যবহৃত 10uf মানের ক্যাপাসিটর এবং ১০০কে মানের রেজিষ্টরটি অবশ্যই গ্রাউন্ড করতে হবে। নতুবা সার্কিটিটি ঠিকভাবে কাজ করবেনা।
  • ট্রান্সজিষ্টরের সঠিক কানেকশন দেওয়াঃ ট্রান্সজিষ্টর হল এমন একটি ডিভাইস যা বিদ্যুৎ শক্তিকে পরিবর্তন এবং সুইচিং এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। সার্কিটে দুইটি ট্রান্সজিষ্টর ব্যবহার করা হয়েছে। একটি NPN অন্যটি PNP টাইপের। ট্রান্সজিষ্টের মান অনুযায়ী পিন আউট বের করে নিয়ে সঠিকভাবে ড্রায়াগ্রাম অনুযায়ী কানেকশন দিতে হবে। নতুবা সার্কিটটি কাজ করবেনা।
  • রিলের সঠিক কানেকশনঃ এই সার্কিটের লোড অন অফ হবার কাজটি করবে রিলে। তাই রিলের কানেকশন অবশ্যই নির্ভুল ভাবে এবং সর্তকতার সাথে দিতে হবে।

উপরের বিষয় গুলো খেয়াল করে সঠিকভাবে কাজ করলেই সার্কিটটি ১০০% কাজ করবে। আশাকরি এই লেখা এবং ভিডিও টিউটোরিয়াল টা আপনাকে সার্কিটটি তৈরী করতে সহায়তা করবে।

আজ এপর্যন্তই। ভাল লাগলে লেখাটা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। যেকোন পরামর্শ এবং মন্তব্য নিচে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। ধন্যবাদ। কথা হবে পরবর্তী লেখাতে।

Facebook Comments

S.k.joy

খুব সাধারণ একজন। বসবাস গ্রামে। জন্ম, বেড়ে উঠা এখানেই। অসম্ভব ভালবাসা এই গ্রামীন জীবন, প্রকৃতি আর পরিবেশের প্রতি। কাজ পড়াশোনার ক্ষেত্রে বার বার সুযোগ এলেও শহরবাসী হয়ে উঠতে পারিনি শেষ পর্যন্ত। শহরের অতি আধুনিকতা, কংক্রিটে মোড়া সুউচ্চ অট্টেলিকায় বন্দি জীবন আমায় কখনও আর্কষিত করতে পারিনি। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে মেঠো পথে বেরিয়ে পড়ি সকালটাকে উপভোগ করতে। রাস্তার দুপাশে সারি সারি গাছ গুলোতে জেগে উঠা পাখিগুলো আমায় স্বাগত জানায়। বুক ভরে নিশ্বাস নিই। শিশিরে ভেজা ঘাস গুলো প্রতি মুহুর্তে সকালের কোমলতাকে জানান দেয়। সূর্যের রোদ সবার আগে গায়ে মেখে ফিরে আসি। দাদু-ঠাম্মা, ছোট ছোট ভাই বোন সবাইকে পরিবার। এইতো জীবন। খুশিতে ভরা জীবন। দূরে গিয়ে সবার থেকে আলাদা হয়ে নিজের মত থাকার মধ্যে জীবনের কোন মানে খুঁজে পাইনা আমি।