আসুন টিভি ট্রান্সমিটার তৈরী করি।চেষ্টা করে দেখুন।আপনিও পারবেন।

আজ আমি আপনাদের দেখাবো কিভাবে টিভি ট্রান্সমিটার তৈরী করবেন।অনেকে এর আগে এফ এম ট্রান্সমিটার তৈরী করছেন কিন্তু বাংলা ব্লগিং এ টিভি ট্রান্সমিটার তৈরী নিয়ে এটাই প্রথম আর্টিকেল হতে যাচ্ছে এবং আপনি শতভাগ নিশ্চিত থাকুন যে আপনি টিভি ট্রান্সমিটার তৈরী করতে পারবেন।

প্রায় ১ বছরেরও বেশী সময় আগে আমি টিভি ট্রান্সমিটার তৈরী করার চেষ্টা করেছিলাম।কিন্তু কয়েকবার ব্যার্থ হবার পর এবং সময়ের অভাবে ওদিকে আর তাকায়নি।গত ৩০ এপ্রিল কোথা থেকে যেন অনেক উৎসাহ পেলাম।এরপর গত দুদিনের চেষ্টায় গতকাল সফল হয়েছি।

জেনে রাখুনঃ আমরা নতুন কোন সার্কিট তৈরী করবোনা।বহুল ব্যবহৃত একটি সার্কিট আমরা নিজেদের প্রয়োজনে নিজেদের মত করে কানেকশন করে সেটাকে টিভি ট্রান্সমিটারে রুপান্তর করবো।

টিভি ট্রান্সমিটার তৈরীতে যা যা প্রয়োজনঃ

  • একটি RF BOX .
  • একটি ৫ ভোল্টের পাওয়ার সাপ্লাই।
  • প্রয়োজন মত তার।

RF BOX কি?কোথায় পাবেন?

RF BOX: RF box এর কাজ মূলত VCD Player থেকে প্রাপ্ত ডেটাকে রেডিও ফিকোয়েন্সিতে রুপান্তর করা।এটা VCD Player এ ব্যবহার করা হয়।

RF BOX কোথায় পাবেনঃ RF box আপনি মার্কেটে সম্ভবত পাবেননা।কারণ এখন এটা আর ব্যবহার করা হয়না।এটা আপনাকে পুরোনো VCD Player থেকে ম্যানেজ করতে হবে।পুরোনো VCD Player আপনি ইলেকট্রনিকস মেকারের দোকান অথবা পূরোনো মার্কেটে খোজ করলে পাবেন।চলুন দেখে নিই RF box দেখতে কেমন।

টিভি ট্রান্সমিটার

এটা হল RF box.RF Circut.কিন্তু VCD Player এর মধ্যে এটা আপনি এই অবস্থায় দেখতে পারবেন না।কারণ এটা টিনের একটা প্লেট দিয়ে ঢাকা থাকে।চলুন দেখে নিই VCD Player এর ভিতর এটা কোন অবস্থায় থাকে।

টিভি ট্রান্সমিটার

এটা হল মূল সার্কিট।লাল মার্ক করা স্থান থেকে ঢাকনা টা উঠালে আপনি RF Circut টা দেখতে পাবেন।লক্ষ্য করবেন,মূল সার্কিটের সাথে RF box টা ৫ টা পিনের সাহায্যে লাগানো থাকে।আপনাকে সাবধানতার সাথে সোল্ডারিং আইরোনের সাহায্যে মূল সার্কিট থেকে RF box সহ সার্কিট টা আলাদা করতে হবে।তাহলে সার্কিট টা দেখতে নিচের মত লাগবে।

টিভি ট্রান্সমিটার

চলুন দেখে নিই কিভাবে কানেকশন করবেনঃ

লক্ষ্য করুন,RF Circut এর বাম দিকে ৪ টা পিন আছে।চলুন এগুলোর কোনটার কি কাজ জেনে নিই।১ম পিন টার কাজ অডিও ইনপুট করা,২য় পিন টার কাজ ৫ ভোল্ট ডিসি ইনপুট নেওয়া,৩য় পিন টার কাজ ভিডিও ইনপুট করা এবং ৪র্থ পিন টা গ্রাউন্ড।বুঝতে অসুবিধা হলে নিচের ইমেজ টা দেখুন।

টিভি ট্রান্সমিটার

পাওয়ার সাপ্লাইঃ উপরের ইমেজে দেখিয়েছি কোন কোন পিনের মাধ্যমে এই সার্কিটে পাওয়ার সাপ্লাই দিবেন।পাওয়ার সাপ্লাই হিসাবে আপনি ট্রান্সফরমার অথবা ব্যাটারি ব্যবহার করতে পারেন।তবে আপনি যদি পাওয়ার সাপ্লাই হিসাবে ব্যাটারি ব্যবহার করেন তাহলে ট্রান্সফরমার অপেক্ষা ভাল ফল পাবেন।৫ ভোল্টের পাওয়ার সাপ্লাই তৈরীর জন্য আপনি রেগুলেটর আইসি ৭৮০৫ ব্যবহার করতে পারেন।

অডিও এবং ভিডিও ইনপুটঃ এই সার্কিটে অর্থাৎ RF Circut এ অডিও এবং ভিডিও ইনপুট দেবার জন্য আপনি ডিভিডি প্লেয়ার ব্যবহার করতে পারেন।ব্যাক্তিগত ভাবে আমি ডিভিডি প্লেয়ার ব্যবহার করেছি।এছাড়া অন্য ডিভাইসও ব্যবহার করতে পারেন যেগুলোতে ভিডিও এবং অডিও আউটের লাইন আছে।লক্ষ্য করবেন,অডিও এবং ভিডিও ক্যাবলের মধ্যে দুইটা তার সাথে এবং আপনি শুধু সিগনাল টাই ব্যবহার করবেন।নিচের ইমেজ টা দেখুন।

টিভি ট্রান্সমিটার

এন্টিনা কানেকশনঃ এই সার্কিটের ডান পাশে দেখবেন একটা পিন আছে যেটা 104pf এর একটা লেগ থেকে বের হয়েছে।এটাতে এন্টিনা হিসাবে কয়েক হাত তার যুক্ত করে তারের অপর প্রান্ত উচু স্থানে বেঁধে দিবেন।নিচের ইমেজ দেখুন।

টিভি ট্রান্সমিটার

 

ঠিকঠাক ভাবে কানেকশন করতে পারলে আপনার টিভি ট্রান্সমিটার,আপনার নিজস্ব টিভি চ্যানেল তৈরী হয়ে যাবে। 😛

টেলিভিশন টিউনিংঃ এবার আপনার টেলিভিশন টিউন করুন।দেখবেন VHF ব্রান্ডে নতুন একটা চ্যানেল দেখা যাবে।ওটায় আপনার চ্যানেল।এবার প্রতিবেশীদের জানিয়ে দিন,আপনার তৈরী নতুন চ্যানেল সম্পর্কে। 😛

অডিও এবং ভিডিও এডজাষ্টঃ যদি দেখেন আপনার টেলিভিশনে শুধু ভিডিও দেখা যাচ্ছে অডিও শোনা যাচ্ছেনা অথবা এর উল্টো টা হচ্ছে তাহলে RF Circut এর নীল কালারের ভেবিয়েবল ক্যাপাসিটর টা স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে আস্তে আস্তে ঘুরান।যখন দেখবেন অডিও এবং ভিডিও দুইটায় পাচ্ছেন তখন ভেরিয়েবল ক্যাপাসিটর টি আর ঘুরাবেন না।

সিগনাল ট্রান্সমিট রেঞ্জঃ আপনার এই টিভি ট্রান্সমিটার কতদূর দূরর্তে আপনার সম্প্রচার কে পৌঁছে দেবে সেটা আমি আপনাকে বলবোনা।ওটা আপনিই দেখবেন।তবে,আপনার সম্প্রচারকে কিভাবে ১ কিলোমিটার দূরর্তে সম্প্রচার করবেন সেটা নিয়ে পরবর্তীতে কোন একদিন লিখব।

 

কপিরাইটঃ বাংলা ব্লগিং এর জগতে টিভি ট্রান্সমিটার তৈরি নিয়ে লেখা এটাই প্রথম আর্টিকেল (কোন ডাউট থাকলে দু’মিনিট সময় নিয়ে খুজে দেখুন)।আমি জানি এটা প্রচুর জায়গায় কপি পেষ্ট করা হবে।তো আপনাকে কপি পেষ্ট করতে নিষেধ করলে আমি জানি আপনি শুনবেন না।কপি পেষ্ট করেন সমস্যা না।তবে সামান্যতম মনুষ্যত থাকলে সোর্স হিসাবে আমার ব্লগের অথবা টেকটিউনসের লিংক দিবেন।

উৎসর্গঃ আমার লাইফের সব থেকে বেশী সময় নিয়ে লেখা এই আর্টিকেল টা আমি আমার শ্রদ্ধেয় দাদা ইঞ্জিনিয়ার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (মিঠু) কে উৎসর্গ করলাম।যিনি আমাকে এই প্রজেক্ট টা করতে প্রয়োজনীয় সময় এবং তর্থ্য দিয়ে সাহায্য করেছেন।

ব্যাস্ততার মাঝেও প্রচুর সময় নিয়ে আর্টিকেল টা লিখলাম।আপানাদের প্রয়োজনে আসলে পরিশ্রম সার্থক।আপনাদের কাজে আসলে মন্তব্য করে যেতে ভূলবেন না।

আজ এ পর্যন্ত।আপনাদের জন্য অনেক শুভ কামনা রইল।ধৈয্য নিয়ে লেগে থাকুন আপনিও পারবেন।তবে আপনার কোন দোষের/ভূলের বোঝা আমার ঘাড়ে চাপাতে আসবেন না।দেখা হবে অন্যকোন আর্টিকেলে।ভাল থাকবেন সবাই।

Facebook Comments

S.k.joy

খুব সাধারণ একজন। বসবাস গ্রামে। জন্ম, বেড়ে উঠা এখানেই। অসম্ভব ভালবাসা এই গ্রামীন জীবন, প্রকৃতি আর পরিবেশের প্রতি। কাজ পড়াশোনার ক্ষেত্রে বার বার সুযোগ এলেও শহরবাসী হয়ে উঠতে পারিনি শেষ পর্যন্ত। শহরের অতি আধুনিকতা, কংক্রিটে মোড়া সুউচ্চ অট্টেলিকায় বন্দি জীবন আমায় কখনও আর্কষিত করতে পারিনি। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে মেঠো পথে বেরিয়ে পড়ি সকালটাকে উপভোগ করতে। রাস্তার দুপাশে সারি সারি গাছ গুলোতে জেগে উঠা পাখিগুলো আমায় স্বাগত জানায়। বুক ভরে নিশ্বাস নিই। শিশিরে ভেজা ঘাস গুলো প্রতি মুহুর্তে সকালের কোমলতাকে জানান দেয়। সূর্যের রোদ সবার আগে গায়ে মেখে ফিরে আসি। দাদু-ঠাম্মা, ছোট ছোট ভাই বোন সবাইকে পরিবার। এইতো জীবন। খুশিতে ভরা জীবন। দূরে গিয়ে সবার থেকে আলাদা হয়ে নিজের মত থাকার মধ্যে জীবনের কোন মানে খুঁজে পাইনা আমি।